Monday 25 March 2013

পরিব্রাজক

গুপ্তপথ আমিই জেনেছি
সমস্ত দুর্গম জুড়ে নেশা জেগেছিল
অস্পষ্ট ঠিকানাও মনে হ'ল আলোকিত মেঘ
আমাকে দেয়নি কেউ 
সোনালি পাদুকা কিংবা মধু মদ্য ঘৃত
তবু আমি চিরঞ্জীবি
রক্তাক্ত পদচিহ্ন
দ্যাখ্, তোর দুয়ারে রেখেছি |

যত কান্না জমে থাকে
মানুষের শোণিতে স্মৃতিতে
শোন্ , তার কতখানি দু-পায়ে বেঁধেছি, শুধু
তোর কাছে একদিন
পৌঁছে দেব বলে
আয় আজ মুখোমুখি নিরস্ত্র দাঁড়াই
রিক্ত কক্ষে দর্পণের প্রতিদ্বন্দ্বী সন্ন্যাসীর মতো
ভুল নিয়ে, ভুলে যাওয়া ভালোবাসা নিয়ে
আমাকে পথের দিকে
ডেকে নেবে পুনরায়
আগুন ও হাওয়া |

গিরিখাত, মরুভূমি, শীর্ণ নদী এবং তোকেও
একান্তে জড়িয়ে রেখে
ক্রমাগত পার হয়ে যাওয়া |

Sunday 24 March 2013

নীলকন্ঠ দুপুরের ব্যালাড

অমৃতের বিপরীতে কূটকথা ছিল
এত তীব্র, এত তার ঝাঁঝ
বুক পুড়ে গেছে , তবু
তার জন্য সকল আসন |

অংশু তার সব অকরুণ
আমাকেই দিয়েছিল
পাকে পাকে বেঁধেছিল দেবতার ঘোর অবিশ্বাস |
আজো সেই পিঠে বেঁধা ছুরি
অত্যন্ত গোপনীয় দেরাজে রেখেছি
যদি চাও, অনন্য জ্যোত্স্নায়
রক্তের পুরোনো দাগ
অশ্রুমতী জলে ধুয়ে দেবো |

দুপুর আমাকে চেনে
আমি চিনি অধরের রৌদ্রমাখা বিষ
নীলকন্ঠ ফুটে আছে ;
প্রেম, তুই আমাকে চিনিস্ ?

যাবজ্জীবন


ভেবেছিলি
গোপন জানালা খুলে
ডেকে নিবি পদাবলী ভোর
যারা তা বুঝেছে-
কথা নির্বাসনে দিয়ে, একান্ত নশ্বর
অভিশপ্ত বাগানে পেতেছে
রুপোলি মাদুর |

শুনেছিলি
নক্ষত্রের দিকে হেঁটে গেছি |
প্রকৃত ঘটনা এই-
আলো ফোটাবার আগে
নিশ্চিত জেনেছি-
গরাদের হাত কতদূর |

চেয়েছিলি
কবিতার চিরস্রাবী ক্ষতের ধমনী
পড়ে আছে অনন্য কর্পূর |

সাঁকো পেরোনোর গান


দেওয়ালরা ভেঙে যাচ্ছেই
তোমাকে কোথায় জানবো
আকাশে জ্বলছে নিদ্রা
ভাঙবো জটিল অভ্যাস |

কারা যে পাথর ছুঁড়ছে
প্রাক্ ইতিহাস শিকারে
অজস্র ভুল বাঁধছে
মানচিত্রের সংকেত |

সুড়ঙ্গ ঘন আঁধারে
হাতড়ে আলোর গন্ধ
অমিত্র মানে বুঝেছি
নদীর ওপারে প্রাঞ্জল |

সাঁকো পেরোলেই সন্ধে
কোন্ তারাটিকে ডাকবো
পথ মানে তবে দু-পায়ে
ক্রমাগত এই মন্দন |

তবু একবার হাতে
কুঠার গাইবে শেষ গান
সেতুবন্ধনে যুক্ত
তোর ভুলে যাওয়া উজ্জ্বল|

বাতাসে ঝড়ের উল্লাস
চাপা হুংকারে অন্ধ
সাঁকো পেরোনোর শেষ গান
কোথায় রেখেছো উত্স |

Friday 22 March 2013

কক্ষপথ সমীপেষু


আমি তো জানিই
কিছু পরে ছিটকে যাব কক্ষপথ থেকে
পড়ে থাকবে অবান্তর রঙিন পেনসিল
পড়ে থাকবে কদম বিলাস, এলোমেলো রান্নাঘর
মতিচ্ছন্ন হাওয়া |

একবার আকাল ছুঁয়েছে
প্রাচীরপত্রের অনুমতি
ভেসে গেছে সাহসী ভেলার ইতিহাস
উঁকি দিয়ে দেখে নেব
তোমাদের গোলাঘরে অপর্যাপ্ত ফসল উঠেছে
নৌকা ডেকেছে গঞ্জের নতুন বধূটি
অবিরত জিরে হলুদের
ক্লান্ত গান
আমাকেও একদিন অমিশ্র কবিতা দিয়েছিল |

শেষ আবর্তনে জাগছে
ঘূর্ণিমেঘ রক্তচঞ্চু প্রবালখঞ্জর
কক্ষপথ, ছিটকে যাচ্ছি
আমাকে অতন্দ্র যাত্রা দাও ||

Wednesday 20 March 2013

ভগবানের সংসার



এখানে কারোর কোনো দায় নেই | দেয়ালে উছলানো আলো অসংখ্য পরিমিতি আরো দৃশ্যমান | ছেঁড়া ফ্রক ছাপফুল স্মৃতিতে ঢেকেছে | হাফপ্যান্টে পেরাইমারি খিচুড়ি কেলাস | দিদিমণি ভ্যানে বসে ; তার বর শহুরে চাকর | এইখানে উঠোন নামের যত ত্রৈরাশিক আছে সেই পাটিগণিতের ছায়া | ভগবান শুয়ে আছে , তার বৌ বছরে আবার- সমান্তর প্রগতির ধাঁধা | মেটে কলসি কালো জল গুড়ের চায়ের সাথে লেড়ো | একশ দিনের কোনো সরকারি কাজ এইখানে ঠিকানা বেভুল | পাঁজরের ওঠাপড়া দিনে রাত্রে পরম চেতনা মানে খিদে | আমি কোন্ পথ ঘুরে এখানে দাঁড়াই | আমার চামড়ায় জ্বলন্ত বর্মের মতো এঁটে বসে পিটার ইংল্যান্ড আর একশ মণ ওজন জানাতে থাকে বাটার প্রোডাক্ট | এসবও তো এই ভগবান আমাকেই দান করেছেন..আহা , আমি রোজ মনে রাখি | তবুও চশমার রঙ আমাকে চেনাতে থাকে ভগবান মাহাতোর অজস্র ঠিকানা আর তার বিপুল সংসার...

ইন্দ্রপ্রস্থ



তারপর, ভোর এসে দাঁড়ালো তোমার ঘরের সামনে | ঘর নয়, ঘর ছিল- অথবা শহরবাসী যাকে শুধু ঝুপড়ি বলে জানে | গতরাতে সব গেছে বৈশ্বানর গ্রাসে | শহরের অগ্নিমান্দ্য ছিল; তাই প্রাত্যহিক যাপনের হাহা সংসারের মলিন ভাষার আয়োজন - গতকাল রাত থেকে স্তব্ধ হয়ে আছে | ভোর এসে বিস্ময়ের চোখ মেলে চেয়ে দেখছে অর্ধদগ্ধ বিছানা ঘুম | চেয়ে দেখছে কালোরঙা বাসন, কাপড় আর ছাইভস্ম বাঁশখুঁটি বইখাতাস্বপ্নের দহন | এই ভোরে নতুন দিনের কথা কিছু লেখা নেই | এর পিছনেই এখন মিছিলে আসবে পৌরসভা, রাজনীতি , লঙর প্রতিশ্রুতি ভাঙার কাহিনি | রোদের লাইনে সানকি হাতে খাড়া থাকবে সাত, দশ , তিরিশ, সত্তর | এই ভোর জানে, ইন্দ্রপ্রস্থ যদি চাও , খান্ডবদহনও জরুরী |