Tuesday 6 August 2013

আগস্ট,2013 // রণদেব দাশগুপ্ত

এইসব ঝলসানো রোদের দুপুরগুলো কিছুতেই তোমাকে স্থির থাকতে দেয় না | জানলার ফ্রেম কথাটা পুরোনো হ'লেও ওখানেই চিরকাল লেখচিত্র আঁকি | আর তার অক্ষ বেয়ে ডিম মুখে পিঁপড়েরা হেঁটে গেলে বুঝি ভালোবাসা আসবে হয়তো- আজ রাতে অথবা শেষ ট্রেনেরও সময় পেরিয়ে গেলে | আমাদের চশমার কাচ যতটুকু সত্যি বলে, বিনা চশমায় তার থেকে ঢের বেশি কল্পলতা পাই | সেইজন্য রেটিনার সকল ব্যর্থতা ক্ষমা করে দিই আজকাল | রান্নাঘরে, বারান্দায়, বাগানে ও বৈঠকখানায় ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার বর্ষাতি আবিষ্কার হবে একদিন | আপাতত ঝাপসা থাকি নদীকুয়াশার ভোররাতে- রহস্যের অচেনা নৌকায়, বৃন্তহীন পংক্তির মতন |

উন্মাদ // রণদেব দাশগুপ্ত

আমূল বিঁধিয়ে দিলে নিশ্চল মূর্তি থেকে
উঠে আসবে কিছু কিছু ভৈরবের চোখ ।
খাঁচায় ও কোটরে লালিত তোমাদের গেরস্থালি
ঈর্ষা ডাকে স্নায়ুপ্রকরণে । কঠিন শিলার বুকে
চলমান উৎকীর্ণ এবং কামনা প্রামাণ্য চশমা ছাড়া
স্বভাবতঃ বাক্যহীন ।
যেখানে প্রপাত আসে বহুবর্ণ জলের ছটায়
সেইসব দৃশ্যাবলী অসংবৃত সাঁঝের দুয়ারে নগরের
দিকে হেঁটে গেলে আমি শুধু শ্লেষাত্মক হাসি ।
গরবিনী বিকালের প্রেম জানি করুণা বিলিয়ে
দিতে পারে ।
এসব দয়ালু অশ্রু চেটেপুটে খেয়েছে মহিমা ।
এইবারে ভস্ম হোক, গায়ে মাখি, ধুলোয় গড়াই
ত্রিনয়ন । তুই সাক্ষী অহর্নিশ , পেন্ডুলামে
দুলছে বসুধা ॥

দেওয়াল // রণদেব দাশগুপ্ত

বলুন তো কেন আমি নেমে আসব
দেওয়ালের থেকে ? কেন আমি
শাপভ্রষ্ট দেবতাকে তুলে নেব
উড়ন্ত কার্পেটে ? যে সমস্ত
সোনালি মার্বেল গড়িয়ে গড়িয়ে
শুধু গিলেছে ঘড়িকে , কেন আমি
তার মুখে এঁকে দেব বাহারি বাগান ?

অভ্রান্ত ভেবেছো বুঝি এই যত
বেনামি চিৎকার যত চাবি যত কৌটো
আর যত প্রিয় ফুলদানি__
এইসব ক্রন্দনের এক হাজার বুকে
এই দ্যাখো ফুটে উঠছি পাঁচ আঙ্গুলে
দাগ রাখা থাপ্পড়ের মতো ।

এই উঁচু দেওয়ালে আমাকে
যতবার টাঙিয়েছো একা __
শেষ অবধি অবিরাম দেওয়াল ভেঙেছি
ফাঁকা ঘরে ॥

Friday 2 August 2013

সংলাপ // রণদেব দাশগুপ্ত



যতটা নিজের বলে ভাবি 
মেঘ ঠিক ততখানি প্রিয়ভাষ নয় কোনোদিনই ,
ভাসিয়ে আমার পথ
লিখেছে সে যেসব কাহিনি 
তার নাম অর্ধেক গোপন

মেঘদূত কবি জানে ,
ভাঙাঘর জানে পান্থজন



কখনো কখনো দেখি 
ধুলো সরালেও ছবি কাঁদে_
অবোধ শিশুর মতো অর্থহীন অশ্রু নামে তুলোট বিকালে

মন্দিরের যেসব দেওয়ালে 
দেখেছো প্রস্তরস্মৃতি
তার কোনো প্রেম আছে নাকি ?

পাথরও তো ধুলো হবে

এইটুকু গল্প লেখা বাকি



আকাঙ্খা , তোমারও কিছু প্রসাধন চাই

আগুনের অবশেষে 
নীল হলুদ নেই 
পড়ে আছে আশ্লেষের ছাই

ভস্মের গোপনে থাকে 
পার্বতীর প্রেম 
গঙ্গা শুধু ধুয়ে দিল চোখ

দৃষ্টি আজ স্তব্ধ থাকো
শরীরটি প্রবাহিত হোক্ 




ততটা প্রতিভা নেই ভেবে 
কোনো কোনো তারাবাজি
কি সংকোচে মুখ ঢেকে রাখে
আমি বলি তাকে জ্বলো, জ্বলো ;
আলো দাও , কিছুটা তো আকাশ ভরাবে

শোনোনি কি এই সত্য

বেদপূজ্য বিবস্বানও
একদিন ক্লান্ত নিভে যাবে




আয় সন্ধ্যা ,
তুই নাকি কবিদের রহস্যের ভাষা

রাতের শৈশব তুই ,
যদি তোকে আড়ালেও ছুঁই ;
নষ্ট হয় অনন্ত পিপাসা

অভিলাষী বৃষ্টি এলো ,
বৃষ্টি এলো সাঁঝশ্রাবণের একা ঘরে

এখন শব্দের কান্না—

ইন্দ্রিয়ের একাকী নগরে



আমার সংগ্রহে ছিল 
জ্বরতপ্ত শ্বাসে ঘেরা
রোদচুমু হরিণীর গান

এবং তুমিও জানো,
বটের গভীর ছায়া 
লিখেছিল শরীরি বানান

পরিচিত গলি শহর,
এখন শুধুই লেখে 
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে

তোর বিক্রি হওয়ার খবর



যদি জানো
বিশুদ্ধ আনন্দ কিছু নেই

তবে আর দুঃখ পাও কেন ?

অথচ এখনও 
শিশুর খিদের মতো 
নারীর ঘৃণার মতো 
ভয়ংকর বন্যা বেঁচে আছে

আধছোঁয়া আনাচে কানাচে

এইবার ধ্যানে বোসো প্রিয়,
পৃথিবী সহজ হলে 
আমাকে আবার ডেকে নিও




আহা ! এইটুকু বৃষ্টিকথা শোনা ;
কানে বাজলো উন্মুখ ত্রিতাল

যদি শ্রবণ বলো,
যদি বলো মগ্ন মোহকাল;
আমার আপত্তি নেই

তুমি তো কবেই
উড়ে গেছো ঘাসভেজা ভোরে

কথাটুকু ঝরে যাচ্ছে 
ঝরে যাচ্ছে দ্যাখো 
শহরের ব্যস্ত মোড়ে মোড়ে




প্রাসাদ নির্জন , তবু 
বেজে উঠছে আঁধারের কানে 
নুপূরের অলৌকিক ধ্বনি

হয়তো এমনই 
আমিও বিস্তৃত '
তোর গর্ভে ; বিশুদ্ধ শোণিতে

অযত্ন উদ্যানে সিক্ত অপার্থিব শীতে ;
প্রাচীন ভাস্কর্য ভাঙে 
চাঁদের আলোর সহবাসে

কখনো জানিস্ নি তো,
নুপূর কাহাকে ভালোবাসে


১০

সংলাপের শেষ 'লে
দর্শকেরা ছেড়ে যায় আলোআঁধারির গুপ্ত মায়া ;
এখানে সেখানে 
ছেঁড়া টিকিটের কুচি, সুগন্ধির ছায়া 
শিশুদের মতো খেলা করে

জানি, এরপরে
শুধুমাত্র পরবর্তী নাটকের কথা

নট নটী, আবহে স্বরে
ভেসে যাওয়া করতালি ভেলা

ক্লান্ত ' বেলা,
তবুও তো অংকে অংকে
নাট্যহীন জীবনেরা তীব্র বয়ে চলে

সংলাপের শেষ হয়

সাজঘর একা কথা বলে